ক্রোধের তাপ, চোখ বন্ধ করে প্রাণপণ সংযমে দাঁড়িয়ে ছিলেন কিছুক্ষণ। তারপরই ক্যাপ খুলে ধোনিদের সঙ্গে হাত মেলাতে শুরু করেন মাশরাফি। কথা বলেন স্টার স্পোর্টসের ক্যামেরার সামনে, সাংবাদিকদের সামনে এসেও বুকের পাথরটা ঠাসা দিয়ে রাখতে হয় তাকে। আসলে বড্ড ক্লান্ত-শ্রান্ত এক যোদ্ধার মতো লাগছিল তাকে। যিনি কি-না প্রতিটি সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা একটু একটু করে ছক কষেছেন, ময়দানে লড়াই করে প্রতিপক্ষ শিবিরে আতঙ্ক তৈরি করেছেন_ তিনিই কি-না এক গোধূলিতে দেখলেন সূর্য ডোবার মুহূর্তে তার সবকিছুই মিথ্যা! এ যন্ত্রণা বড্ড ভয়াবহ। দুই বছর ধরে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। ভালোবাসা, আদর, কখনও
কখনও বকুনি দিয়েও দলের প্রত্যেক ক্রিকেটারের মধ্যে ভেতরের জেদ বের করে আনতে পেরেছেন। তিনিই এখন মনে করছেন, অনেক হয়েছে! ড্রেসিংরুমে কান পেতে শোনা খবর, কলকাতার ইডেনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি খেলেই এই ফরম্যাট থেকে হাত তুলে নেবেন মাশরাফি। অবসরের ঘোষণা দেবেন টি২০ থেকে। যদিও এই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই কাছের মানুষের কাছে তিনি এমন ইচ্ছের কথাটি বলেছিলেন।
তার প্রথম লক্ষ্য ছিল, দলকে সুপার টেনে নিয়ে যাওয়া। যেটি তিনি সফল হয়েছেন। দ্বিতীয় টার্গেট ছিল, সুপার টেনের দুটি কিংবা একটি দলকে হারানো। ভারতের সঙ্গে মাশরাফিই মস্তিষ্ক খাটিয়ে ধোনিদের হারানোর ছক কষেছিলেন। শুরুর পাঁচ ওভারে পাঁচ বোলারকে আনা, ব্যাটিং অর্ডারে নিজে পাঁচ নম্বরে নেমে ব্যাটিং লাইনআপ লম্বা করা। সবকিছুতেই ছিল তার অনেক দিনের খেটেখুটে করা একটি সুন্দর নকশা। এশিয়া কাপের ফাইনালের পর ভীষণভাবে চেয়েছিলেন ব্যাঙ্গালুরুতে ভারতকে আটকে দেওয়ার। কিন্তু সেটা আর হলো না।
বিশ্বকাপ মিশন শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ টি২০ খেলবে সেই জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে কিউইদের বিপক্ষে। তা ছাড়া বছরে এই ফরম্যাটে খেলাও কম। দুটি কি তিনটি করে খেলতে হয়। তাই এই ফরম্যাটে নতুন কাউকে সুযোগ করে দিতে চাইছেন মাশরাফি।
সেই ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর, খুলনায় বাংলাদেশের অভিষেক টি২০ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন তিনি। ২৬ বলে ৩৬ আর বল হাতে ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাও হয়েছিলেন। তার পর এই ১০ বছরের মধ্যে কাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৯তম ম্যাচটি খেলতে নামছেন। দলের এবং বোর্ডের কেউ কেউ চাইছেন, ৫০তম ম্যাচটি খেলেই এই ফরম্যাট থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানাক মাশরাফি। কিন্তু মাশরাফি তার শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা করে এই বিশ্বকাপ থেকেই 'অবসর' বলতে চাইছেন। গোড়ালির চোটের কারণে টেস্ট থেকে আগেই সরে এসেছেন, তবে ওয়ানডেতে নিয়মিত থাকতে চান তিনি। শরীর যদি সাপোর্ট করে, তাহলে অন্তত ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলে যেতে চান। তবে মাশরাফিকে এখন আর শুধু একজন অধিনায়ক হিসেবে দেখে না বোর্ড, তার উপস্থিতি দলকে যে কতটা অনুপ্রাণিত করে তা ভালো করেই জানেন বিসিবিপ্রধান নাজমুল হাসান পাপন। সেদিন ভারতের সঙ্গে হারার পর বোর্ড সভাপতি ব্যাঙ্গালুরুতে মাশরাফির সঙ্গে কথা বলেছেন।
দলে এ মুহূর্তে তাকে আরও বেশ কিছুদিনের জন্য প্রয়োজন। শেষ পর্যন্ত মাশরাফিই তার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আপাতত কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে কালকের ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখার পণ করেছেন অধিনায়ক নিজেই। সুপার টেন থেকে অন্তত একটি জয় নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরতে চান।
Thursday, March 24, 2016
অবসরে যাচ্ছেন মাশরাফি!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment