Monday, March 21, 2016

প্রথম দফার ইউপি ভোট আজ-সংঘর্ষ সহিংসতায় নিহত ৯


আজ মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শুরু হচ্ছে। প্রথম দফায় দেশের ৩৪ জেলার ৭৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ইউপি এলাকায় টানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ ভোট নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে সহস্রাধিক। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ প্রশাসনের কাঙ্খিত সহযোগিতা না পাওয়ায় সহিংসতা কমাতে পারছেন না বলে স্বীকার করেছেন। তবে আজ ভোট কেন্দ্রে কারচুপি ও সহিংসতার ঘটনা ঘটলে রির্টানিং অফিসার ও আইন শৃংখলা বাহিনী দায়ী থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আজ মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ হবে ৭২১টি ইউপিতে,  কাল বুধবার ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে ১১টিতে ও ২৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে টেকনাফের হ্নীলা ও হোয়াইক্যাং ইউপিতে। ইতোমধ্যে প্রথম দফায় ৫৪টি ইউপি চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। এ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ও সহিংসতা বিরাজ করছে। ভোটারদের মধ্যে সহিংসতা ও ভোট ডাকাতির আশংকা রয়েছে। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনের মতো ইউপি নির্বাচনেও ব্যাপক কারচুপি ও সহিংসতার আশংকা করছেন ভোটাররা। তবে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনী এলাকায় মাঠে টহল শুরু করেছে বিজিবি,  র‌্যাব,  পুলিশ,  কোস্টগার্ড ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক লাখ ৮০ হাজার সদস্য। একই সঙ্গে ৩৪ জেলার ১০১টি উপজেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরাও অপরাধ তদারকিতে মাঠে রয়েছেন।

কমিশনের শেষ মুর্হুতের নির্দেশনায় নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ শেষে দ্রুত ফলাফল প্রেরণ করতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে সবধরনের প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনী আইনানুযায়ী কোনো নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৩২ ঘণ্টা,  ভোট গ্রহণের দিন সকাল আটটা থেকে রাত ১২টা এবং ভোটগ্রহণের দিন রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় কোন ব্যক্তি জনসভা আহ্বান,  অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান এবং কোন মিছিল বা শোভাযাত্রা করতে বা তাতে যোগদান করতে পারবেন না। এই বিধি লঙ্ঘন করলে অন্যূন ৬ মাস বা অনধিক ৩ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন।

এদিকে কমিশন জানিয়েছে,  নির্বাচনী এলকায় নির্বাচনী অপরাধ তদন্ত ও তার বিচারের জন্য বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ করা হয়েছে। গত ২০ মার্চ থেকে এসব বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। তারা নির্বাচনের আগের দুইদিন,  নির্বাচনের দিন ও পরের দিনসহ মোট চারদিন নির্বাচনী অপরাধ বিচার কাজে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিশন জানিয়েছে,  প্রথম দফায় ইউপি নির্বাচনের জন্য ১০১টি উপজেলায় একজন করে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে,  প্রথম দফায় ৭ হাজার ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য একজন করে প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। আগেই প্রিজাইডিং অফিসার,  পোলিং অফিসার নিয়োগ দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ইসি জানিয়েছে প্রথম দফায় ৭ হাজার ভোট কেন্দ্রে এক লাখের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবেন। এর বাইরে থাকবে বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন ও অপরাধ বিচরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন। প্রথম দফায় আজ ২২ মার্চ ৭২১ ইউপিতে এবং আগামী কাল ২৩ মার্চ আরও ১১ ইউপি এবং ২৭ মার্চ ২টি ইউপিসহ মোট ৭৩৪ ইউপিতে ভোটগ্রহণ করা হবে। ৩১ মার্চ দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ করা হবে ৬৪৩ ইউপিতে। তৃতীয় দফায় নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ২৭ মার্চ পর্যন্ত তৃতীয় দফার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে। কমিশন জানিয়েছে,  ইউপিতে প্রথম ধাপে ইতোমধ্যে ৫৪ জন চেয়ারম্যান,  ১৭৯ জন সাধারণ সদস্য ও ৫৪ জন সংরক্ষিত সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম দফার ভোটে তিন হাজার ৩৪ জন চেয়ারম্যান,  সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার ৮৪৭ জন ও সংরক্ষিত পদে সাত হাজার ৫৭৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতায় রয়েছেন।

বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় বিজয়ী ৫৪ চেয়ারম্যান : প্রথম দফার ইউপি নির্বাচনে ৫৪ জন চেয়ারম্যান বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় বিজয়ী হয়েছেন। তারা সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ইউনিয়নগুলো হলো,  খুলনার তেরখাদা,  গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার বর্নি,  কুশলী,  পাটগাতী, ঝালকাঠির নলছিটির সিদ্ধকাঠি,  বাগের হাটের মোংলার সোনাইলতলা,  রামপালের মালিকেরবেড়,  চিতলমারীর চরবানিয়ারী,  বড় বাড়িয়া,  চিতলমারী,  হিজলা,  সন্তোষপুর,  কলাতলা ও শিবপুর। বাগের হাটের ফকিরহাট,  মোল্লাহাটের আটজুড়ী,  চুনখোলা,  গাওলা,  কোদালীয়া,  কুলীয়া,  উদয়পুর,  বাগের হাট সদরের ঝারুইপাড়া,  বেমরতা,  বিষ্ণুপুর,  ডেমা,  গোটাপাড়া,  যাত্রাপুর,  কাড়াপাড়া,  খানপুর,  রাখালগাছি,  বাগেরহাটের কচুয়ার বাধাল,  ধোপাখালী,  গজালিয়া,  কচুয়া,  মোড়লগঞ্জের চিংড়াখালী,  পঞ্চকরণ,  তেলিগাতি। বি বাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের পাহাড়িয়াকান্দি,  ছয়ফুল্লাকান্দি,  বরিশালের বানারীপাড়ার উদয়কাঠি,  ভোলা সদরের দক্ষিণ দিঘলদী,  দৌলতখানের চরখলিফা। মাদারীপুর জেলার শিবচরের বন্দরখোলা,  বহেরাতলা উত্তর ও দক্ষিণ,  ভান্ডারীকান্দি,  দত্তপাড়া,  কাদিরপুর,  কুতুবপুর,  মাদবরেরচর,  নিলখী,  শিরুয়াইল। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের জৈনসার,  সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়ীয়ার ইউনিয়ন পরিষদ।

সহিংসতায় নিহত ৯ ॥ আহত সহস্রাধিক  : প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। নির্বাচনের আগেই গতকাল সোমবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতায় ৯ জন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত সহস্রাধিক ব্যক্তি।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জেলায় ইউপি নির্বাচনের প্রচারকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটেছে বলে সংশি¬ষ্ট চেয়ারম্যান ও মেম্বর প্রার্থীদের দেয়া অভিযোগ থেকে জানা গেছে। বেশিরভাগ সহিংসতায় সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে সরকার সমর্থক প্রার্থীদের। বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও তার সমর্থকরাই সংঘর্ষে জড়িয়ে সহিংসতা সৃষ্টি করেছে। আক্রান্ত হয়েছে সরকার সমর্থক বিদ্রোহী ও বিএনপির প্রার্থীরা। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়ায়ও সংঘর্ষ সহিংসতা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে-সহিসংতা বন্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংশ্লিষ্টদের ধারণা নির্বাচনের পরে এ সহিংসতা আরো বেড়ে যেতে পারে।

ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথমবার দলীয়ভিত্তিতে নির্বাচন হওয়ার কারণে এবার সহিংসতা যেন অন্যবারের চেয়ে বেশি হচ্ছে। তবে সহিসংতা ঠেকাতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে সরকার সমর্থকদের পক্ষাবলম্বনের অসংখ্য অভিযোগ এসেছে ইসিতে। এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন, বিশেষ করে রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না প্রার্থীরা। এ পর্যন্ত যে ৯ জন নিহত হয়েছেন তার ৫ জনই বরিশাল বিভাগে। সেখানে নির্বাচনী সহিংসতা সবচেয়ে বেশি হয়েছে। এছাড়াও মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, সাতক্ষীরা, বগুড়া, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতায় অনেক লোক আহত হয়েছে।

মেম্বার প্রার্থীর হাতের কব্জি কেটে উল্লাস : ভোলার লালমোহনে মেম্বার প্রার্থীর হাতের কব্জি কেটে উল্লাস করার মতো লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, রোববার সকাল ৮ টার দিকে জাকির হোসেন ভূঁইয়া ধলিগৌরনগর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড চর মোল্লাজী গ্রামে নির্বাচনী প্রচার করতে যায়। এসময় পূর্ব থেকে ওঁৎপেতে থাকা প্রতিপক্ষ গিয়াস ভূঁইয়ার ক্যাডার রিয়াজের নেতৃত্বে কিছু লোক জাকিরের উপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে ক্যাডাররা জাকিরের বাম হাতের কব্জি কেটে তাকে পার্শ্ববর্তী খালে ফেলে দিয়ে উল্লাস করতে থাকে। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে তার  অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে দুপুর পৌনে ১টায় লালমোহন থেকে হেলিকপ্টারযোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।

২০ মার্চ রোববার দিবাগত রাতে বান্দরবানের রুমা উপজেলার গালেঙ্গা ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী শান্তি প্রিয় ত্রিপুরাকে (৩৮) বাসা থেকে ডেকে নিয়ে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। রাত সাড়ে ৩টার সময় তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এলাকাবাসীরা জানান, রাতে এক দল অস্ত্রধারী রামদোপাড়া এলাকায় এসে এবারের তৃতীয় ধাপের ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী শান্তি প্রিয় ত্রিপুরাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে রামদোপাড়া এবং মঘাপাড়া এলাকার মাঝামাঝি এলাকায় গুলী করে হত্যা করে চলে যায়।

১৯ মার্চ পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর ইউনিয়নে অওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ও আ’লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলীবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে একজন ও আহত হয়েছে ৭ জন। নিহত ব্যক্তির নাম গহের মন্ডল (৩০)। তিনি ঢালারচর ইউনিয়নের খয়েরবাগান গ্রামের পাশান মন্ডলের ছেলে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢালারচর ইউনিয়নের মিরপুর গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

১৬ মার্চ বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের ভাসানচরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৫ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সমীর চারু নিহত হন। তার মা, বাবা ও ছোট ভাইসহ মোট ১০ জন গুরুতর আহত হন।

১৪ মার্চ রাতে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘর্ষে বগুড়ার শিবগঞ্জের বুড়িগঞ্জ ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মাহতাব আলী মারা যান।

১৩ মার্চ রাত ১২টার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের বেরুয়াইল গ্রামে নিজের বাড়ির কাছে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন কৃষক মো. সোহেল মিয়া (৩২)। মহিনন্দ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থী আবদুস ছালামের সমর্থক ছিলেন সোহেল। ওইরাতে অপর সদস্য প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলামের সমর্থকদের সঙ্গে তার বাকবিত-া হয়। এর জেরে সোহেলকে ছুরিকাঘাত করা হয়।

গত ১১ মার্চ  ভোলা সদরের চরসামাইয়া ইউনিয়নে নির্বাচনের প্রচার শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত হয়েছেন সিরাজুল ইসলাম। সকালে চরসামাইয়া ইউনিয়নের বজলু মেম্বারের পক্ষে প্রচার শেষে বাড়ি ফিরছিলেন সিরাজসহ কয়েকজন। শান্তিরহাট বেড়ীর পাড় এলাকায় দুর্বৃত্তরা সিরাজকে মারধর করে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা সিরাজকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

গত ৯ মার্চ পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন আওয়ামী লীগ-মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সামসুল হকের খালাতো ভাই আশরাফ ফকির (৩৫)।

গত ৮ মার্চ রাতে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায়  আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় নিহত হন বিএনপির চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর ভাগ্নে ছাত্রদল নেতা শামসুল হক (২৮)। শামসুল হক নাজিরপুর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন।

২২ ফেব্রুয়ারি বরগুনার আমতলীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে বশির উদ্দিন (৩৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়। নিহত বশির উদ্দিন আমতলীর হলদিয়া গ্রামের বাসিন্দা কাঞ্চন আলী সিকদারের ছেলে। স্থানীয় থানার ওসি পুলক বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাকির হোসেন ও বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল ইসলামের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ ১৩ জন আহত হন। পরে আহত একজনের মৃত্যু হয়।

এদিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক রোববার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সারাদেশে ইউপি নির্বাচন পূর্ববর্তী মোট ২০৮টি সহিংসতারর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সেদিন পর্যন্ত  সাতজনের প্রাণহানি ঘটেছে। রোববার পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সে আয়োজিত  সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। আইজিপি বলেন, ছোট বড় এসব সহিংসতার ঘটনায় ১৪৩ মামলা ৫৫টি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) নিয়েছে পুলিশ। সরকারদলীয় প্রার্থীদের কোন ধরণের ছাড় দেয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, নির্বাচন পূর্ববর্তী সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৯৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সরকারদলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, অভিযোগ আপনাদের কাছে আসলে হবে না। আমাদের কাছে অভিযোগ দেন। আমরা অ্যাকশন নেব।

খুলনা অফিস : ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে খুলনার ৬৭টি ইউনিয়নে আজ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হওয়ায় নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন রূপসার শ্রীফলতলা ও আইচগাতীর রিটার্নিং অফিসার। সবমিলিয়ে সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে উদ্বেগ-আতংক ভর করছে খুলনার ইউনিয়ন পরিষদগুলোয়।

এমন পরিবেশের মধ্যে নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষ করেছে জেলা নির্বাচন অফিস। ইতোমধ্যে জেলার ৬৭টি ইউনিয়নের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য ৬৫০ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৩ হাজার ৬৮৭ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ৭ হাজার ৩৭৪ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। নির্বাচনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে কমিশন। নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৭ উপজেলায় ১৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবন উপকূলের কয়রা ও দাকোপ উপজেলায় কোস্ট গার্ড সদস্যরা টহল দিচ্ছে।

জেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানা গেছে, খুলনার ৬৭টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩০৬ জন, সদস্য পদে ২ হাজার ৬১২ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭৭৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দি¦তা করছেন। ৯টি উপজেলার ৬৫০টি ভোটকেন্দ্রের ৩ হাজার ৬৮৭ বুথে ভোটগ্রহণ করা হবে। কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৪২৭টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। ৬৭টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ লাখ ১৪ হাজার ২৮৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬ লাখ ৬ হাজার ৬২৭ জন এবং নারী ভোটার ৬ লাখ ৭ হাজার ৬৭৮ জন।

বিভিন্ন ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে সংঘাত ও সংঘর্ষের আশংকা তাদের মাঝে আরও তীব্র হচ্ছে। শনিবার গভীর রাতে পাইকগাছার সোলাদানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়ামিন আখতার সোমাকে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি ওই ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এনামুল হকের স্ত্রী। নির্বাচনে স্বামীর সহযোগী হিসেবে মাঠে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছিলেন তিনি। বিএনপির প্রার্থী এনামুল হক অভিযোগ করেছেন, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই তার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছিল। পরে এ ঘটনাকে ডাকাতি বলে প্রচার করা হচ্ছে। 

এর আগের রাতে দাকোপ উপজেলা কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি ঘটনা ঘটেছে।

আড়ংঘাটার চেয়ারম্যান প্রার্থী মাতলুবুর রহমান মিতুল বলেন, নির্বাচন এগিয়ে আসায় এলাকায় অপরিচিত প্রার্থীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। বিএনপির পোলিং এজেন্টদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এসব অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছি না।

রূপসার শ্রীফলতলা ইউনিয়নের বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হাসান বাপ্পী অভিযোগ করেন, শনিবার রাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি গিয়ে পোলিং এজেন্ট না হতে হুমকি দেয়া হচ্ছে। সরকারি দলের প্রার্থীদের হুমকিতে তার কর্মীরা শেষ দিনে প্রচার চালাতে পারেনি।

এদিকে অব্যাহত চাপের মুখে রিটার্নিং কর্মকর্তার পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন শ্রীফলতলা ও আইচগাতি ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাণি  সম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ বি এম জাকির হোসেন। এই ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ডের সব ইউপি সদস্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছিল। এনিয়ে নির্বাচন কমিশন শোকজ করেছিল তাকে। এবার ৪টি ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়া এবং দ্বিমুখী চাপে অব্যাহতির আবেদন করেন তিনি।

এ ব্যাপারে ডা. এ বি এম জাকির হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

খুলনার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, শারীরিক অসুস্থার কারণে তিনি নির্বাচন থেকে অব্যাহতির আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। এ ধরনের আবেদন করারও কোনো নিয়ম নেই। তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে। ৬৭টি ইউনিয়নে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃংখলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।

খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিভূতি ভূষণ ব্যানার্জি জানান, সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করতে প্রতিটি কেন্দ্রে দুই জন সশস্ত্র পুলিশ ও ১৪ জন আনসার দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া নির্বাচনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবে।

এদিকে খুলনার ৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ ও শান্তিপূর্ন ভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে জেলার নয় উপজেলার মধ্যে সাতটি উপজেলায় বাংলাদেশ বর্ডারগার্ড (বিজিবি) ও দুইটি উপজেলায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতি উপজেলায় চারজন করে নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।  খুলনা জেলার নয় উপজেলার ৬৭টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নয়টি উপজেলার মধ্যে ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, ফুলতলা, তেরখাদা, দিঘলিয়া, রুপসা ও  পাইকগাছায় প্রতিটিতে তিন প্লাটুন ( ১ প্লাটুন= ২০ সদস্য) করে বর্ডার গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। সুন্দরবন সন্নিহিত দাকোপ ও কয়রা উপজেলায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। খুলনায় মেয়াদোত্তীর্ণ না হওয়ায় রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এছাড়া তেরখাদা উপজেলা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দি¦তায় নির্বাচিত হয়েছেন। এখানকার ৯টি ওয়ার্ডে সদস্য ও সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবার ইউপি নির্বাচনে খুলনার ৬৭টি ইউনিয়নে মোট ৬৫০টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪৪টি স্থায়ী এবং ৬টি অস্থায়ী কেন্দ্র । ৬৭টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ লাখ ১৪ হাজার ২৮৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬ লাখ ৬ হাজার ৬২৭ জন এবং নারী ভোটার ৬ লাখ ৭ হাজার ৬৭৮ জন।

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সংবাদদাতা : আজ মঙ্গলবার কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রথম ধাপের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন রাজিহার, বাকাল, বাগধা, গৈলা ও রতœপুর ইউনিয়নে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৪৫টি ভোট কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ১লাখ ৬ হাজার ৭শ ১৮জন। এতে মোট পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৫৩ হাজার ৩৫৪ জন এবং মোট মহিলা ভোটার সংখ্যা ৫৩ হাজার ৩৬৪ জন। এবার উপজেলার ৫ ইউনিয়নে আ’লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, আ’লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্রসহ মোট ২২ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিটি ইউনিয়নেই আ’লীগ ও বিএনপি দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে লড়াই হবে দ্বিমুখী এবং ২টিতে হবে ত্রিমুখী। এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় ভোটাররা মনে করছেন লড়াই হবে আওয়ামীলীগ-বিএনপির মধ্যে।

রাজিহার ইউনিয়নে আ’লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ ৩জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বাকাল ইউনিয়নে আ’লীগ, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৬জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাগধা ইউনিয়নে আ’লীগ, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৫জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গৈলা ইউনিয়নে আ’লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ৩জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রত্নপুর ইউনিয়নে আ’লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৫জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৫ ইউনিয়নের ২২ জন চেয়ারম্যান পদে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা হলেন- ১নং রাজিহার ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ ইলিয়াস তালুকদার (নৌকা), শোভন রহমান মনির (ধানের শীষ), কাজী এনামুল হক (লাঙ্গল)। ২নং বাকাল ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান বিপুল দাস (নৌকা), মোঃ তারেক হোসেন (ধানের শীষ), বহিস্কৃত শ্রমিকলীগ নেতার স্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোসাঃ লাবন্য আক্তার (ঘোড়া), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থী মাওঃ জাকারিয়া বক্তিয়ার (হাতপাখা), স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখর বসু (মটর সাইকেল) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সুধাশং শেখর (অটোরিস্কা)। ৩নং বাগধা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি (নৌকা), কে এম রেজাউল ফয়েজ রেজা  (ধানের শীষ), সুব্রত সরকার (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থী মোঃ আঃ হান্নান মিয়া (হাতপাখা), স্বতন্ত্র প্রার্থী সরদার মোঃ রফিক (আনারস)। ৪নং গৈলা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল হোসেন লাল্টু (ধানের শীষ), সোয়েব ইমতিয়াজ লিমন তালুকদার (নৌকা) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থী মোঃ আঃ হক হাওলাদার (হাতপাখা)। ৫নং রতœপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা সরদার (নৌকা), শাহ্ মোঃ ফিরোজ (ধানের শীষ), মোঃ শরিফুল ইসলাম (লাঙ্গল), আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ শাহিন আলম টেনু (আনারস) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদুল ইসলাম খোকন (ঘোড়া)।

ইতোমধ্যেই ভোট কেন্দ্রের আইন শৃংখলা রক্ষায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও নির্বাচনী সরঞ্জামসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়েছে। ইন্সপেক্টর পদমর্যাদাসহ ২৫০জন পুলিশ সদস্য, দুই প্ল¬াটুন বিজিবি, ৭৬৫জন আনসার, র‌্যাব ও মোতায়েন রয়েছে নির্বাচনী কেন্দ্র গুলোতে। ২০মার্চ থেকে নির্বাচনের পর দিন ২৩ মার্চ পর্যন্ত আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবেন। প্রতি ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে থাকবে ১জন অস্ত্রধারী পুশিল অফিসারসহ ৩জন পুলিশ সদস্য, অস্ত্রধারী ১জন পিসি, ১জন এপিসিসহ ১৭জন আনসার সদস্য। এছাড়াও ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে র‌্যাব ও বিজিবির সদস্য টহলের দ্বায়িত্বে থাকবে। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ৪৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে পুলিশ ২৪টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ন ও ২১টি কেন্দ্র সাধারন কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

আজ নিবার্চনের দিন পরিবেশ নিয়ে আতংকে রয়েছেন ভোটার ও প্রার্থীরা। প্রথম ধাপে ২২মার্চ অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৫টি ইউনিয়নে ভোটের দিনে পরিবেশ কেমন হবে ভোটার ও প্রার্থীরা এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছেন প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীদের কাছে। নির্বাচন উপলক্ষে ইতিমধ্যেই বিছিন্ন কিছু ঘটনায় তাদের সন্দেহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বিগত উপজেলা নির্বাচনে সকাল ৯টার মধ্যে ভোট প্রদান শেষ হওয়ায় ইউপি নির্বাচনে ভোটারা ভোট কারচুপির আশংকা প্রকাশ করেছেন। প্রশাসন অবশ্য প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভায় ভোটার ও প্রার্থীদের নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছে। এর পরেও ভোটার ও প্রার্থীদের সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপির প্রার্থীরা এই আতংকে ভুগছে। নিবার্চনে উপজেলার কিছু এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী ও সমর্থদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী লাবন্য আক্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সংবাদিক সম্মেলন করেছে।

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই সদস্য প্রার্থীর বিরোধকে কেন্দ্র করে রোববার সকালে রাজাপুর গ্রামে বোমা হামলা পাল্টা হামলাসহ দুটি বসতঘর ভাঙচুরসহ ৮ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গুরুতর আহত ৪ জনকে গৌরনদী ও বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।//মিয়া হোসেন, নাছির উদ্দিন শোয়েব, সংগ্রাম।

No comments:

Post a Comment