Wednesday, March 23, 2016

বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন প্রয়োজন: নাজমুল হুদা

সাবেক বিএনপি নেতা ও যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদা বলেছেন, বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন প্রয়োজন। তবে তিনি বিএনপিতে আর ফিরে যাবেন না। কারণ তার নিজের দল রয়েছে। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ব্যারিস্টার হুদা বিএনপির সঙ্গে তার সম্পর্কের অতীত ও বর্তমানের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। বাকিটা তার সাক্ষাতকারেই দেখুন।
বিবিসির আজকের সাক্ষাৎকারে আমাদের সাথে সরাসরি উপস্থিত আছেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তিনি এক সময় বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী ছিলেন এবং বিএনপির রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।
বিবিসি : আপনি পেশাগতভাবে একজন আইনজীবী কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের কাছে আপনি পরিচিত একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে। সেই বিষয়টা জনগণ কিভাবে দেখে ?
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা : অবশ্যই দেশের জন্য আমাকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে হয়। আলোচনা বলেন সমালোচনা বলেন আমি সবকিছুরই সম্মুখীন হয়েছি। এটা ভিন্ন রকমের আনন্দ দেয়। বাংলাদেশের জনগণের সাথে আমার যে পরিচিতি তাতে এটা বুঝা যায় যে আমি দেশের রাজনীতিতে একটা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছি। আমার দেশের ও এলাকার জনগণের সাথে কথা বলে আমি এটা জানতে পেরেছি যে দেশের জন্য আমি কিছুটা হলেও করেছি।
বিবিসি : আপনি একজন আইনজীবী হয়েও রাজনীতিতে আসার তাগিদটা অনুভব করলেন কেন এবং কিভাবে আপনি এই রাজনীতিতে আসলেন ?
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা : আমি যখন ১৯৬৯ সালে ব্যারিস্টার হয়ে দেশে ফিরি তখনই যে আমি রাজনীতিতে হাতেখড়ি দেব এমনটা কথা ছিল না। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও এমএ করেছি। রাজনীতির উপর ধারণা আমার আগে থেকেই ছিল। বিএনপির জন্মলগ্ন থেকেই আমি বিএনপির সাথে সংশ্লিষ্ট। বিএনপির সদস্য হিসেবে গঠনতন্ত্রের ঘোষণা পত্রে আমার স্বাক্ষর রয়েছে। সেইক্ষেত্রে দেশের জন্য কিছু করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এরই ধারাবহিকতায় বর্তমানে আমি রাজনীতিবিদ।
বিবিসি : জিয়াউর রহমান যখন রাজনৈতিক দল করলেন সেটা একটা সামরিক শাসনের ছত্রছায়ায় ছিল। আপনি একজন আইনজীবী, আপনি বলেছিলেন যে আপনি একজন গণতন্ত্রবান মানুষ। কেন আপনি এটা অনুভব করলেন একটা সামরিক শাসনের ছত্রছায়ায় যে দল গড়ে উঠছে সেই দলে আপনাকে যোগ দিতে হবে ?
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা : সামরিক ছত্রছায়ায় গড়ে উঠলেও আমি সুস্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলাম জিয়াউর রহমান সাহেব তার সামরিক লেবাস ছেড়ে দেননি এবং তিনি সে সময় হাল ধরেছিলেন। সে সময় বাংলাদেশের জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল। সে অবস্থাতে একটা বিরাট বড় পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল। জিয়াউর রহমান সাহেব রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করবেন তাতে আমি নিশ্চিত ছিলাম। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে সম্পূর্ণ একটা নতুন ধারা শুরু হবে। তার মধ্যে একটা ইতিবাচক প্রভাব থাকবে। তাই আমি ঠিক করেছিলাম এটাই হবে আমার প্রকৃত স্থান। যার মাধ্যমে আমি আমার রাজনীতিটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।
বিবিসি : আমরা দেখলাম যে ১৯৯০ সালের পর বিএনপি যে দুদফা ক্ষমতাসীন হয়েছেন এবং মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছে কিন্তু এখন আবার আপনি বিএনপির সাথে নেই। বিএনপি আপনাকে বহিষ্কার করেছে কিংবা আপনি বেরিয়ে এসেছেন নানা কথা শোনা যাচ্ছে এমন পরিস্থিতি তৈরি হল কেন ?
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা : আমি রাজনীতিতে একটা জিনিস মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে এখানে ভন্ডামির কোনো জায়গা নেই। মানুষ একজন রাজনীতিবিদকে চিনবে তাদের সেবক হিসেবে। তার ভেতর এবং বাহির এক হতে হবে। আমি স্পষ্ট কথায় বিশ্বাসী। আমি যা মনে করতাম সেটা নিয়েই আমি রাজনীতি করতাম। সেকারণেই অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে যা অনেকেরই ভাল লাগেনি। আমি কয়েকটা কথা বলেছিলাম সেটা হয়তো আমার নেত্রীর ভালো লাগে নি। সেটার কারণে হয়তো আমি বহিষ্কার হয়েছি। আমি তৎকালীন সরকারে থাকা অবস্থায় তার চরম বিরোধিতা করেছিলাম। আমি মনে করেছিলাম যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন আছে। সরকারের মন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আমি এটা মনে করেছি। সেটা আমি প্রচার করেছি। এটাই আমার বিশ্বাস। এই ধরনের কিছু কার্যকলাপের কারণে তখন মন্ত্রীত্ব থেকে আমাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। পরবর্তীতে আবার আমাকে পার্টিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং আমি যোগাযোগ মন্ত্রী হয়েছি। আমি যখন যে সরকারে ছিলাম তখন সেই সরকারের স্বার্থ রক্ষা করে কাজ করতে।
বিবিসি : আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে আপনি এমন কথা বলতেন তাতে বিরোধিদের আন্দোলন করতে বা হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার মত হত। আপনি এই অভিযোগের সাথে কতটা একমত ?
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা : আমি যা উচিৎ সেটাই বলব। তার প্রভাব রাজনীতিতে কিভাবে পড়বে সেটার বিচার বিশ্লেষণ আমি করি না। আমি যদি মনে করি যে আজকে আমার একটা কথা জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে তাহলে আমার যেটা বলা উচিৎ সেটাই বলতে হবে। এটাই এখনকার রাজনীতিতে একটা বিরাট ঘাটতি। অনেকেই রয়েছে যারা খুব ভালো করেই জানে তাদের নেত্রী যে সিদ্ধান্তÍ দিচ্ছে তা ভুল। এটার কিন্তু অন্যভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া যেত কিন্তু এর প্রতিবাদ কেউ করতে পারেনি। কেউ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোন কথা বলবে না কারণ তারা ভাবে যে ভবিষ্যতে আর নমিনেশন পাবে না। তারা এখন যে সুযোগটা পাচ্ছে তা তারা পরে আর পাবে না। আমার মনে হয় এটা রাজনীতির অনেক ক্ষতি করছে।
বিবিসি : আপনি একজন আইনজীবী ছিলেন কিন্তু বিএনপি একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠল, বিএনপি আপনাকে মন্ত্রী বানালো এবং আপনি ব্যাপক পরিচিতি পেলেন। সেই দলটির প্রতি আপনার যতটা কৃতজ্ঞতা থাকা দরকার সেটা সেভাবে গড়ে উঠেনি এটা কি সত্যি ?
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা : আমি পাবলিককে বলেছি যে বিএনপিতে আমার চেয়ে সিনিয়র ছিলেন খালেদা জিয়া। আমি এখনও মনে করি যে আমার চেয়ে বড় নেতা বিএনপিতে এখনও নাই। আমি যে মতে বিশ্বাসী তা যদি আমি আমার দলের সাথে প্রকাশ করতে না পারি তাহলে সেই দলে থাকা অর্থহীন।
বিবিসি : আপনি বলেছিলেন যে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের আপনি একজন। আপনার সাথে তখন বিএনপিতে যারা ছিল তাদের প্রত্যেকেরই একটা শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। কিন্তু অনেকে যেটা বলে প্রতিষ্ঠাতা কালের সদস্য হিসেবে আপনি দলে তেমন একটা ভিত তৈরি করতে পারেননি। এর কারণটা কি এবং এর সত্যতা কতখানি ?
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা : বিএনপির সাথে আমার শক্ত ভিতের কথা বলেন তাহলে বলব আমি একটু স্বাধীন মনের ছিলাম। আমি আমার মত, চিন্তাকে একটু আলাদাভাবে প্রকাশ করতে চাইতাম। অনেকেই আমার সাথে মিশতেন না। তারা মনে করতেন যে আমার পার্টি থেকে যেমন বিতর্কিত করা হয়েছে তারাও ঠিক তেমনি বিতর্কিত হবে। তাই আমার সাথে তারা ততটা মেলামেশা করতো না। কিন্তু আমি মনে করি আমার জায়গায় আমি ঠিক আছি।
বিবিসি : আপনাকে বহিষ্কার করার পর কিংবা আপনি বিএনপিতে না থাকার পর আপনি নতুন ভাবে তৃণমূল বিএনপি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশে আমি দেখেছি যে বড় কোন রাজনৈতিক দল থেকে যদি কাউকে বের করে দেওয়া হয় তাহলে তাদের কোন বড় অবস্থান থাকে না। এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন ?
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা : সেটা ভবিষ্যতই বলে দেবে। কারণ এটা আপনি যেভাবে বললেন সেটা আসলে সত্য না। এটা সত্যি যে দল থেকে বেরিয়ে এলে তখন ভালো অবস্থানে থাকাটা খুব কষ্টকর হয়।
বিবিসি : আপনাকে যদি আবার বিএনপিতে ডাকে তাহলে আপনি কি আবার ফিলে যাবেন ?
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা : আমি কেন ফিরে যাব। আমার তো একটা দল আছে।
তাহলে আপনি কোনভাবেই বিএনপিতে ফিরবেন না ?
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা : না। সে পথ বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ আমি মনে করি বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
বিবিসি : বিএনপির অনেকেই বলে যে আপনাকে আবার ডাকা হলে আপনি ফিরে যাবেন ?
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা : কখন না। সে পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
বিবিসি : আমরা দেখি বাংলাদেশে যারা প্রথিতযশা আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে হাইকোর্টে প্রাকটিস করছে তারা আইনজীবী হিসেবে সন্তুষ্ট হন না। আমরা দেখছি উভয় দলের রাজনীতির সাথে তারা জড়িত আপনিও তার ব্যতিক্রম নন। এর কারণটা কি ?
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা : এটা আমার বেলায় মনে হয় সঠিক নয়। আমি যথেষ্ট সন্তুষ্ট। আমি আমার পেশায় সচেতন ছিলাম এখনও আছি। আমি সুপ্রিম কোর্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতিও বটে। আইনজীবী হিসেবে আমি নিজেকে সফল মনে করি। আমি রাজনীতিবিদ হিসেবে যেটা করতে চেয়েছি সেটা হচ্ছে অব্যবস্থার পরিবর্তন করা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে ডেমোক্রেসিতে যেমন কমিটমেন্ট রয়েছে। আইনজীবী হিসেবেও তেমন কমিটমেন্ট রয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসা যেমন সুবিধা আছে তেমনি বিপদও আছে এবং সেখানে নানা উত্থান পতন আছে। যেটা আপনার ক্ষেত্রে দেখেছি। যার কারণে অনেককে জেলে কাটাতে হয়েছে। তাদের ব্যাপারে যে অভিযোগ এসেছিল সেটা অনেকে বিশ্বাসও করেছিল এ বিষয়ে আপনি কি মনে করেন ?
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা : আমি মনে করি রাজনীতিবিদের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। আমাকে ৫০ দুর্নীতিবাজের একজন করা হয়েছিল। আমি ৩০টা মামলার শিকার। তার প্রত্যেকটাই শেষ হয়েছে। যেহেতু আমি অত্যন্ত ঘনিষ্টভাবে খালেদা জিয়ার পাশে ছিলাম তাই আমাকে মাইনাস টু ফরমুলাতে তার শক্তিশালী হাতগুলোকে টার্গেট করা হয়েছিল।
বিবিসি বাংলা থেকে নেয়া

No comments:

Post a Comment